SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - NCTB BOOK
Please, contribute to add content into বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তন.
Content
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব
জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি
সমবায় আন্দোলন
পোশাক শিল্পের সম্প্রসারণ
গ্রামীণ জীবন ছেড়ে নগর জীবন গ্রহণ প্রক্রিয়া
শিল্প সম্প্রসারণের ধারাবাহিক উপায়
নগর সভ্যতা গড়ে তোলার পদ্ধতি
অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া

সমাজ পরিবর্তনশীল। বাংলাদেশের সমাজও এ বৈশিষ্টের ব্যতিক্রম নয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে প্রদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শিক্ষা, প্রযুক্তি ও যোগাযোগের পরিবর্তন এদেশের সমাজ ও অর্থনীতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। ব্যাপক শিল্পায়ন ও নগরায়ণ নারীর ভূমিকায় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। সমাজ জীবনের এ পরিবর্তনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার উদ্ভব ঘটেছে। এ অধ্যায়ে আমরা সামাজিক পরিবর্তনের ধারণা, বাংলাদেশের সমাজ পরিবর্তনের কারণ, গ্রাম ও শহরতেসে এ পরিবর্তনের প্রভাব এবং নারীর ভূমিকার পরিবর্তন সম্পর্কে জানব ।

এ অধ্যার পাঠ শেষে আমরা-

  •  সামাজিক পরিবর্তনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব;
  •  বাংলাদেশের সমাজ পরিবর্তনের উপাদানসমূহ ব্যাখ্যা করতে পারব ;
  •  বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে সমাজে সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব;
  • বাংলাদেশের সমাজ পরিবর্তনের উপাদান হিসেবে শিল্পায়ন, নগরায়ন,শিক্ষা, প্রযুক্তি ও যোগাযোগের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব,
  •  সামাজিক পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বাংলাদেশে নারীর ভূমিকার পরিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারব;
  •  সামাজিক পরিবর্তনজনিত অবস্তায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হব ;
  •  সামাজিক পরিবর্তনজনিত বিষয়ে সচেতন হব ।
Content added By

সামাজিক পরিবর্তনের ধারণা

সামাজিক পরিবর্তন বলতে সমাজ কাঠামো ও এর কার্যাবলির পরিবর্তনকে বোঝায়। প্রতিটি সমাজের মৌল কাঠামো গ উঠে সে সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা এবং উক্ত ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন পেশার মানুষের সম্পর্কের মাধ্যমে। দাবার এই কাঠামোর সাথে গড়ে ওঠে কতকগুলো উপরি কাঠামো, যেমন- আইন-কানুন, রাজনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি। সুতরাং সমাজের মৌল ও উপরি কাঠামোর পরিবর্তনই সামাজিক পরিবর্তন ।

সামাজিক পরিবর্তনের ধারণা সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী কিনে ডেভিস বলেন, 'সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে সামাি সংগঠনের মধ্যকার পরিবর্তন। ম্যাকাইভার বলেন, 'মানবীর সম্পর্কের পরিবর্তন হচ্ছে সামাজিক পরিবর্তন। অর্থাৎ সামাজিক পরিবর্তন হলো সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের আচার-আচরণের পরিবর্তন। সমাজের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পরিবর্তন। মোটকথা, সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে কোনো জাতির জীবন ব্যকথার সামগ্রিক পরিবর্তন।

সামাজিক পরিবর্তন সংঘটিত হয় কখনো মন্থর গতিতে আবার কখনো দ্রুতগতিতে। এই পরিবর্তনের প্রভাব অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ এমনকি সনাতন জীবন ব্যবস্থাকেও গভীরভাবে স্পর্শ করে। সমাজের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড লাভ করে নতুন গতি। উন্মুক্ত হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখা ও কলাকৌশল। সৃষ্টি হয় নতুন সৃষ্টির উম্মাদনা এবং শুরু হয় নতুন সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া।

Content added By

বাংলাদেশের সমাজ পরিবর্তনের উপাদান এবং এর প্রভাব
বাংলাদেশের সমাজিক পরিবর্তন দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রভৃতি উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। সমাজের এ ক্ষেত্রসমূহে পরিবর্তনের মূলে রয়েছে সুনির্দিষ্ট কতকগুলো উপাদান। নিম্নে এ উপাদানগুলো আলোচনা করা হলো।

১. প্রাকৃতিক উপাদান : বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতিগত অবস্থান সামাজিক পরিবর্তনের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। ধীর এবং আকস্মিক ভৌগোলিক পরিবর্তন, জলবায়ু সংক্রান্ত পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রভৃতি বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে এবং সমাজের ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে। এদেশে নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, টর্নেডো, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন প্রতিদিনের ঘটনা। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে । তখন পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধানের জন্য নতুন পদ্ধতি অবলম্বনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এর ফলে মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটে থাকে, যেমন- নদীভাঙন এ দেশের শহরাঞ্চলে বস্তি সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ। শহরাঞ্চলে বস্তি সমস্যা নানামুখী সমস্যার জন্ম দিয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি বহু কার্যক্রম গ্রহণ করায় শহুরে সমাজে নানা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি করে। মানুষ এসব সমস্যা মোকাবিলায় নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করে সামাজের পরিবর্তন সাধন করে।

২. জৈবিক উপাদান : জৈবিক উপাদান সামাজিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জন্ম ও মৃত্যুহার, গড় আয়ু, জনসংখ্যার ঘনত্ব, জনসংখ্যার প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার মান নিয়েই জৈবিক উপাদান। মানুষের জৈবিক অবস্থার পরিবর্তন, যেমন- জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা হ্রাস, স্থানান্তর অথবা ঘনত্বের পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রতিরোধে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। জন্ম ও মৃত্যুহার হ্রাস সমাজকাঠামো পরিবর্তনে অবদান রাখছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বেকারত্ব, শিশুশ্রম ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার মতো নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

কাজ-দলগতঃ দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রাকিতিক উপাদানের প্রভাব ও পরিবর্তনসমূহ চিহ্নিত কর।

একক : যে কোনো একটি জৈবিক উপাদান চিহ্নিত কর এবং সমাজে এর প্রভাব বিশ্লেষণ কর।

৩. সাংস্কৃতিক উপাদান : সংস্কৃতি সামাজিক পরিবর্তন সূচনা করে। যে কোনো সমাজের দিকে তাকালেই দেখা যাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, মানুষের মূল্যবোধের পার্থক্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শের ভিন্নতা প্রভৃতি। এরই ফলে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন সংস্কৃতি লালিত প্রতিষ্ঠান। এসব সমাজের মধ্যে নানা রকমের পরিবর্তন সৃষ্টি করে, যেমন- ব্রিটিশ রাজত্বের সময় বাংলার সমাজব্যবস্থার উপরে বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব বিশেষভাবে পরিদৃষ্ট হয়। তাছাড়া ভ্রমণকাহিনী পাঠ, বিদেশ ভ্রমণ, অন্যান্য দেশের জনগণের সঙ্গে সাক্ষাৎকার এসবই সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। হযরত মুহম্মদ (সা.), গৌতমবুদ্ধ, যীশুখ্রিস্ট প্রমুখ মহামানব মানুষের সামনে তুলে ধরেছিলেন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন মূল্যবোধ, নতুন আদর্শ, যা সে সময়ে সমাজে নানামুখী পরিবর্তন সূচনা করেছিল। বাংলাদেশের শহরগুলোর দিকে তাকালেও বোঝা যায় একাধিক সংস্কৃতির মিশ্ররূপ।

৪. শিক্ষা : সামাজিক পরিবর্তনের একটি বিশেষ উপাদান হলো শিক্ষা। শিক্ষা হলো একধরনের সংস্কার সাধন ও বিরামহীন প্রক্রিয়া। সমাজের সদস্যদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার আত্মবিশ্বাস ও বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা জাগ্রত করে। শিক্ষা যাবতীয় অন্ধত্ব, অজ্ঞতা, কুসংস্কার প্রভৃতি থেকে মুক্তি দেয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে বাংলাদেশের সমাজে নারী শিক্ষার প্রসার জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে যা তাদের বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করেছে। এর ফলে দেশে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৃষ্টি হয়েছে বহু সামাজিক নীতি ও আইন। যৌতুক আইন, পারিবারিক আইন, নারী উন্নয়ন নীতি প্রভৃতি সামাজিক সচেতনতার ফসল। নারী শিক্ষা নারীকে কর্মমুখী করেছে। এতে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটেছে। এভাবে বিজ্ঞান শিক্ষা, বাণিজ্য শিক্ষা প্রভৃতি সমাজে পরিবর্তন এনেছে।

৫. প্রযুক্তি : প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞানের প্রায়োগিক দিক। প্রযুক্তির প্রচলন ও প্রসারের মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মানসিক গঠন এবং সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন সাধিত হয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে বেতারের আবিষ্কার সামাজিক জীবনে আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, রাজনীতি এবং অন্যান্য আরও বহু ধরনের সমাজিক কাজকে প্রভাবিত করেছে। মোটর গাড়ি আজ সামাজিক সম্পর্কের পরিধিকে বিস্তৃত করেছে। প্রযুক্তির ক্রমোন্নতিতে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় দু'ধরনের ফলাফল দেখতে পাই। একটি প্রত্যক্ষ এবং অপরটি পরোক্ষ। কতকগুলো সামাজিক পরিবর্তন প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের অবশ্যম্ভাবী পরিণাম, যেমন-শ্রমিকের নতুন নতুন সংগঠন, সামাজিক যোগাযোগ পরিধির বিস্তৃতি, বিশেষ কাজে বিশেষ দক্ষতা অর্জন, গ্রামীণ জীবনের ওপর নাগরিক জীবনের প্রভাব প্রভৃতি। এগুলো প্রযুক্তির প্রত্যক্ষ প্রভাব। আর বেকারত্ব বৃদ্ধি, শ্রমিক-মালিকের মধ্যে ব্যবধান, প্রতিযোগিতার তীব্রতা বৃদ্ধি প্রভৃতি প্রযুক্তি পরিবর্তনের পরোক্ষ প্রভাব । কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যার কল্যাণে উন্নত জাতের বীজ, সেচ, সার প্রয়োগের ফলে কৃষি উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে গেছে। তাছাড়া আমাদের দেশে এখন মৎস্য চাষে নতুন নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। চিংড়ি চাষে অভাবনীয় পরিবর্তন, সমন্বিত মাছ চাষ, গবাদিপশুর প্রজনন, গরু মোটাতাজাকরণ প্রভৃতি প্রযুক্তির প্রত্যক্ষ ফসল। প্রযুক্তি কৃষি খামার অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পল্লী উন্নয়ন সংস্থা। এসব সংস্থা গ্রামীণ কৃষির পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কেরও পরিবর্তন সাধন করেছে। কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, যা সমাজ থেকে ক্ষুধার কষ্ট লাঘব করেছে।

কাজ-এককঃ সাংস্কৃতিক উপাদানের প্রভাবে সৃষ্ট পরিবর্তনগুলোর একটি ছক তৈরি কর। দলগত ঃ সামাজিক পরিবর্তনে কৃষি প্রযুক্তির ভূমিকা চিহ্নিত কর।

৬. যোগাযোগ : যে দেশের যোগাযোগ মাধ্যম যত উন্নত সে দেশের অর্থনীতিও তত উন্নত। যোগাযোগ সামাজিক পরিবর্তনের একটি অন্যতম উপাদান। জল, স্থল ও আকাশপথে যোগাযোগ, টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ই-মেইল, ডিশ অ্যান্টেনা, মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, বিভিন্ন ধরনের পত্র-পত্রিকা প্রভৃতি সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। আজকাল ঘরে বসে বিশ্বের সকল দেশের সাথে যোগাযোগ করা যায়। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঠাগার ঘরে বসে ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজনীয় গ্রন্থ নির্বাচন করে পড়াশুনা করা যায়। যোগাযোগের এ অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে ঘরে বসে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করছে। পড়াশোনার জন্য বিদেশে যাচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ নিয়েছে। মোবাইল প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের ব্যবহার সমাজ ও দেশকে উন্নয়নের পথে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে গেছে। দূর প্রবাসে থাকা সন্তান, পিতামাতা, আত্মীয় স্বজন এক মুহূর্তেই একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে। সরকারের নেতৃত্ব ও যথাযথ পদক্ষেপ সমাজের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

৭. শিল্পায়ন ও নগরায়ণ : শিল্পায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা শিল্পভিত্তিক ও উৎপাদনমুখী অর্থনীতি ও সমাজে রূপান্তারিত হয়। শিল্পায়নের ফলে নগরায়ণ ঘটে। ব্যাপক শিল্পায়নের ফলে গ্রামীণ জীবন ছেড়ে নগর জীবন পদ্ধতি গ্রহণের প্রক্রিয়াই নগরায়ণ। বাংলাদেশে স্বাধীনতাউত্তরকাল থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্পের প্রসার ঘটেছে। এর মধ্যে পোশাক, ঔষধ, চা, চিনি, সুতা, কাগজ, তামাক, বিস্কুট, প্রসাধনী ও সাবান শিল্প প্রধান। শিল্প প্রসারের ফলে বেকারত্ব ঘুচাতে গ্রামের অনেক দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক নগরমুখী হচ্ছে এবং নগর জীবন গ্রহণ করছে। বর্তমানে শুধু পোশাক শিল্পেই ৪০ লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছে। সরকার ইতোমধ্যে মজুরী কমিশন গঠন করে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরী নির্ধারণ করেছে। ১৯৯০ সালের পূর্ববর্তী ক্ষুধার হাহাকার এখন আর দেখা যায় না।

শিল্পায়নের ফলে আমাদের সমাজ জীবনে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে। এদেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, অধিকহারে উৎপাদন বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ও জাতীয় আয় বৃদ্ধির মূলে রয়েছে শিল্পায়ন। শিল্পায়নের ফলে শিল্পের স্থানীয়করণ প্রক্রিয়া সূচিত হয়ে নগরায়ণের সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে খুলনার খালিশপুর, চট্টগ্রামের বাড়বকুণ্ড, সিলেটের ছাতক প্রভৃতি আজ শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত।

শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে। এতে ভৌগোলিক দূরত্ব কমে গেলেও সামাজিক দূরত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরুষ, নারী এক সাথে কাজ করছে। শিল্প শ্রমিকেরা অধিকাংশ সময় কাটায় সহকর্মীদের সাথে। কর্মক্ষেত্রে প্রাত্যহিক জীবনের প্রভাব ব্যক্তির সমগ্র জীবনধারাকে প্রভাবিত করে। ব্যক্তির জীবনদর্শন, আচার-আচরণ, মানসিকতা, মূল্যবোধ প্রভৃতির পরিবর্তন ঘটেছে। শিল্পনগরীর বাসস্থান স্বল্পতা, স্বল্প মজুরি ইত্যাদি কারণে পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে একসাথে বসবাস করা সম্ভব হয় না। ফলে যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারের সৃষ্টি হয়েছে। আবার পারিবারিক সংগঠনে বিবাহবিচ্ছেদ, শিশু-কিশোরদের সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে সমস্যা, প্রবীণদের নিরাপত্তাহীনতা, অপরাধ প্রবণতাসহ বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দিয়েছে। আমাদের দেশের শহরে বস্তির উদ্ভব এ শিল্পায়নের ফসল। যেসব স্থানে পোশাক শিল্প, চামড়া শিল্প, চুড়ি শিল্প, তামাক-বিড়ি শিল্প গড়ে উঠেছে সেসব স্থানে বস্তির উদ্ভব হয়েছে। বস্তিগুলো সামাজিক জীবনে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, অপরাধ, কিশোর অপরাধের মতো বহু সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে। এসব সমস্যা আবার অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে, যা নগর জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। শিল্পায়ন শহর অর্থনীতিতে একদিকে যেমন আশীর্বাদ অন্যদিকে অভিশাপও। তবে সমন্বিত প্রচেষ্টায় অভিশাপ দূর করা সম্ভব।

Content added By

সামাজিক পরিবর্তন এবং নারীর ভূমিকা

বাংলাদেশে শিল্পের ক্রমোন্নতি নারীর সামাজিক জীবন ও মর্যাদার ক্ষেত্রকে প্রভূত পরিবর্তন সাধন করেছে। শিল্পের প্রসার আজ নারীকে গৃহের সীমিত পরিবেশ থেকে বাইরের কর্মমুখর জগতে টেনে এনেছে শিক্ষাক্ষেত্রে নারী আগের তুলনায় অনেক অগ্রসর হয়েছে। নারীরা এখন শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। নারীরা ব্যাপক সংখ্যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারাদেশ ব্যাপী কলেজগুলোতে স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (পাস), স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। তারা এখন উচ্চশিক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। নারী শিক্ষা অবৈতনিক হওয়ায় গ্রামীণ মেয়েরা আগের চেয়ে পড়াশোনার সুযোগ বেশি পাচ্ছে। তাছাড়া নারী শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করেছে, যা গ্রামীণ নারী শিক্ষাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে সিরেছে। এখন গ্রামীণ সমাজের মানুষ ছেলে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি কন্যা শিশুর শিক্ষাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর ফলস্বরূপ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের এস এসসি পরীক্ষা ও এইচএসসি পরীক্ষার নারী শিক্ষার্থীরা ফলাফলে অনেক এগিয়ে রয়েছে ।

কাজ-দলগতঃ শহর ও গ্রামাঞ্চলের নারীর ভূমিকায় পরিবর্তনের কারণসমূহ চিহ্নিত কর ।

কাজ-এককঃ শিক্ষাক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীর ভূমিকার পরিবর্তনের চিত্র খুলে ধর ।

নারী এখন শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত হচ্ছে। এক সময় নারী শুধু গৃহস্থালি কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আজ তারা বাংলাদেশের শহর এলাকার পোশাক শিল্প, ঔষধ তৈরির কারখানা, টেলিফোন ও টেলিযোগাযোগ শিল্প, পাট, চা, কাপল শিল্প, স্থাপত্য শিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রভৃতি শিল্প ও কল-কারখানার চাকরি করছে। তাছাড়া শিক্ষিত নারীরা বিভিন্ন পেশা, যেমন- চিকিৎসা, গাইন, শিক্ষকতা, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। সরকারি চাকরিতে প্রশাসন, পুলিশ, ভাক, সমবায়, পানসারসহ প্রায় সবগুলো ক্যাডারে নারীদের বিরাট একটা অংশ চাকরি করছে। সেনাবাহিনীতেও নারীদের অংশগ্রহণ প্রশংসনীয়। আমাদের গ্রাম পর্যায়ে নারীরা সরকারি সংস্থা কিংবা বেসরকারি সংস্থা থেকে খাগ নিয়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এ কর্মসংস্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে, বৃক্ষরোপণ, নার্সারি, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল পালন, মৎস্য চাষ, মধু চাষ, হাস-মুরি পালন, টেইলারিং, ফল-মূলের ব্যবসা প্রভৃতি। তাদের ভাগ্নে সংসার চলছে, সন্তান পড়াশোনা করছে, পরিবারের সদস্যরা ाস্থ্য সেবা পাচ্ছে। আবার এসব নারী পুরুষের পাশাপাশি বন্ধু সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে। সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকারও পরিবর্তন ঘটেছে। নারীর ভূমিকার এই পরিবর্তন নারীর ক্ষমতায়নের পাকে সুগম করেছে। নারীকে করেছে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।

Content added By